বাংলাদেশে ও ভারতে গৃহসাজসজ্জার জন্য গাছপালা ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যা ঘরের ভেতরে সৌন্দর্য, সতেজতা বৃদ্ধি করে। অ্যাপার্টমেন্ট, অফিস বা বাড়িতেই এগুলো বায়ুর মান উন্নত করতে ও শান্ত পরিবেশ তৈরিতে গাছপালা গুরুত্বপূর্ণ। এই নিবন্ধে ঘর সাজানোর কিছু গাছ সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানবো (Home decor plants)।
গৃহসজ্জার জন্য গাছ নির্বাচন সম্পর্কে জানুন (Home decor plants):
ঘরে রাখার জন্য গাছ নির্বাচন করতে কিছু সঠিক পদ্ধতির প্রয়োজন হয় (Home decor plants)। সেই সম্পর্কে নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।
অন্দর সজ্জার ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত (Home decor ideas):
সুন্দর পরিবেশের সাথে গাছের চাহিদা মেটানোর জন্য নিখুঁত ঘর সাজানোর গাছ নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গাছ নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু তথ্য নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।
- সূর্যালোক ছাড়া সহজেই বেঁচে থাকতে পারে এমন গাছ নির্বাচন করুন। কম আলোয় বেঁচে থাকতে পারে এমন কয়েকটি গাছের উদাহরণ হলো স্নেক প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট এবং পিস লিলি।

- লতানো বা ঝুলন্ত গাছ দিয়ে ঘর সাজাতে চাইলে পোথোস, মনস্টার বা ফিলোডেনড্রন ব্যবহার করতে পারেন। কম রক্ষনাবেক্ষন যুক্ত গাছপালা ব্যবহার করা সব থেকে বেশি সুবিধাজনক।
ঘর সাজানোর জন্য কিছু গাছের নামসহ বিস্তারিত দেওয়া হলো (Home decor plants name):
১. মানি প্ল্যান্ট (Money plant):
বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে, মানি প্ল্যান্ট সঠিক দিকে রাখলে তা সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং ইতিবাচক শক্তি আকর্ষণ করে। এই গাছের পিছনের দিকের লতাগুল্ম ও প্রাণবন্ত সবুজ পাতার কারণে, এটি ঘরের নান্দনিকতা বৃদ্ধি করে ঘরকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
উপকারিতা:
- মানি প্ল্যান্টস জাইলিন ও কার্বন মনোক্সাইডের মতো ঘর দূষণকারী পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে, যার ফলে বাতাসের মান উন্নত হয়। এগুলি যত্ন নেওয়া সহজ, কম আলোতে এরা ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। শোবার ঘরে এই গাছ রাখলে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি হয়, যা ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।
২. স্নেক প্ল্যান্ট (Snake plant):
স্নেক প্ল্যান্ট ভারত ও বাংলাদেশের গৃহ সজ্জার জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি উদ্ভিদ। এদের লম্বা, খাড়া পাতাগুলি বাড়ি এবং অফিসের জায়গাগুলিতে একটি আধুনিক স্পর্শ যোগ করে।
উপকারিতা:
- স্নেক প্ল্যান্ট চমৎকার বায়ু পরিশোধক, যা বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিনের মতো বিষাক্ত পদার্থ দূর করে। এই গাছ রাতে অক্সিজেন ছেড়ে দেয়, যা ঘুমের মান উন্নত করতে সাহায্য করে। এগুলিতে ন্যূনতম জল দেওয়ার প্রয়োজন হয়, এগুলি কীটপতঙ্গ এবং রোগের প্রতিরোধী। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে স্নেক প্ল্যান্ট কম্পিউটার ও ওয়াই-ফাই রাউটারের মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণের প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
৩. পিস লিলি (Peace Lily):
পিস লিলি একটি জনপ্রিয় গৃহমধ্যস্থ উদ্ভিদ যা নিজের সৌন্দর্য ও অসংখ্য উপকারিতার জন্য পরিচিত (Home decor plants)। এই উদ্ভিদটি সম্প্রীতি, শান্তি এবং সমৃদ্ধির সাথে যুক্ত। এটিকে প্রায়শই সহানুভূতি বা সৌভাগ্যের প্রতীক হিসাবে উপহারও দেওয়া হয়।
উপকারিতা:
- পিস লিলি আর্দ্রতার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। অ্যালার্জি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি উপকারী। এই গাছটির ন্যূনতম যত্নের প্রয়োজন হয় এবং কম আলোতেও এটি বেড়ে উঠতে পারে। একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করতে শোবার ঘরে রাখার জন্য এটি দুর্দান্ত।
৪. অ্যালোভেরা (Aloe vera):
অ্যালোভেরা ঘরের ভেতরে রাখার জন্য একটি দুর্দান্ত উদ্ভিদ (Home decor plants)। ভারত ও বাংলাদেশে অন্দর সজ্জার জন্য এই উদ্ভিদ একবারে আদর্শ।
উপকারিতা:
- অ্যালোভেরা পাতার ভিতরে থাকা জেল ছোটখাটো পোড়া, কাটা এবং ত্বকের জ্বালা নিরাময় করতে পারে। এর রক্ষনাবেক্ষন করা সহজ, ন্যূনতম জল প্রয়োজন এবং পরোক্ষ সূর্যালোকে এরা বাঁচতে পারে। এর অনন্য, কাঁটাযুক্ত পাতাগুলি ঘরের ভেতরে একটি তাজা এবং আধুনিক স্পর্শ যোগ করে। এই উদ্ভিদ সবুজ গাছপালা শিথিলকরণ প্রচার করতে পারে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

৫. স্পাইডার প্ল্যান্ট (Spider plant):
স্পাইডার প্ল্যান্ট একটি চমৎকার অভ্যন্তরীণ উদ্ভিদ (Indoor plants), গৃহ সজ্জা ছাড়াও এর অনেক উপকারিতা রয়েছে, এগুলির লম্বা, খিলানযুক্ত পাতা এবং ছোট উদ্ভিদগুলো যেকোনো ঘরে সৌন্দর্য যোগ করে।
উপকারিতা:
- স্পাইডার প্ল্যান্টস আর্দ্রতার মাত্রা বাড়ায়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি করতে পারে এবং বাতাসে শুষ্কতা কমায়। এগুলি বিভিন্ন আলোর পরিস্থিতিতে বৃদ্ধি পায়, যা নতুনদের জন্য একবারে আদর্শ। ঘরের ভিতরে সবুজ পরিবেশ চাপ কমাতে এবং মেজাজ উন্নত করতে দেখা গেছে, যা মাকড়সা গাছগুলিকে মানসিক সুস্থতার জন্য দুর্দান্ত করে তোলে। এই গাছগুলি বিড়াল ও কুকুরের জন্য বিষাক্ত নয়।
৬. ক্যাকটাস (Cactus):
ক্যাকটাস বিভিন্ন আকার, ও রঙের হয়, যা এগুলিকে বাড়ি এবং অফিসের জন্য নিখুঁত সাজসজ্জার জিনিস করে তোলে। ফেং শুই অনুসারে, জানালা বা দরজার কাছে ক্যাকটাস রাখলে তা নেতিবাচক শক্তি শোষণ করতে এবং সুরক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করতে পারে।
উপকারিতা:
- গবেষণায় দেখা গেছে যে ক্যাকটাস মানসিক চাপ কমাতে, মেজাজ উন্নত করতে এবং উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারে। এটি অল্প জলে বেড়ে ওঠে, যা বাগান করার অভিজ্ঞতা নেই এমন ব্যক্তিদের জন্য আদর্শ। এর উন্নত বায়ুর গুণমান ঘুমের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এর কিছু প্রজাতি পরিবেশে বিষাক্ত পদার্থ এবং দূষণকারী পদার্থ কেও কমিয়ে দেয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু তে মানি প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, ক্যাকটাস সহ বিভিন্ন ধরণের অভ্যন্তরীণ উদ্ভিদগুলো ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। তবে, মাঝে মাঝে কীটপতঙ্গের সমস্যাগুলির মোকাবেলা করা প্রয়োজন। পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার প্রতি আগ্রহের জন্য বেশি সংখ্যক মানুষ তাদের বাড়ি, অফিস এবং বাণিজ্যিক স্থানে ঘর সাজানোর গাছ হিসেবে উপরে বর্ণিত উদ্ভিদগুলো অন্তর্ভুক্ত করছে (Home decor plants)।
একটি প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ):
প্রশ্ন ১. ঘরের ভিতরে কোন গাছ রাখা যায় (Home decor plants)?
উত্তর ১: ঘরের ভিতরে রাখার জন্য পোথোস, স্নেক প্ল্যান্ট, পিস লিলি এবং স্পাইডার প্ল্যান্ট এগুলি আদর্শ। স্নেক প্ল্যান্ট ও পোথোস কম আলোতেও বেড়ে উঠতে পারে।
প্রশ্ন ২. শোবার ঘরে কোন গাছ রাখা উচিত?
উত্তর ২: স্নেক প্ল্যান্ট শোবার ঘরে রাখার একটি কারণ হলো এটি রাতে ঘরের ভিতরের বায়ু দূষণকারী পদার্থগুলিকে ফিল্টার করতে সাহায্য করে। ল্যাভেন্ডার মানসিক চাপ কমাতে এবং ভালো ঘুমের জন্য উপযুক্ত।
প্রশ্ন ৩. কোন গাছটি বাড়িতে সবচেয়ে শুভ?
উত্তর ৩: পবিত্র তুলসী ও মানি প্ল্যান্টকে বাড়ির জন্য সবচেয়ে শুভ গাছ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এগুলি ইতিবাচক শক্তি, সুস্বাস্থ্য নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়।
প্রশ্ন ৪. বাড়িতে বেল গাছ থাকলে কি ক্ষতি হয়?
উত্তর ৪: বাড়িতে বেল গাছ থাকাতে ক্ষতির সম্ভাবনা নেই, তবে ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও পছন্দের ভিত্তিতে এর ব্যবহার বিবেচনা করা উচিত।