Written by 7:30 pm Interesting, Gardening

Fertilizer: বাংলাদেশীয় সার সম্পর্কে ফলপ্রসূ তথ্য

Fertilizer

দক্ষিণ এশিয়ার কৃষিক্ষেত্রে বাংলাদেশ হলো একটি শক্তিশালী দেশ, এই দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে সার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপাদন সর্বাধিক করতে এই দেশ সারের উপর নির্ভর করে। 

বাংলাদেশী সার প্রস্তুতকারকরা নিজেদের দেশের মাটি এবং জলবায়ু পরিস্থিতির সাথে মানানসই উচ্চমানের সার তৈরি করেন, মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য জৈব সার এবং সুষম সার পদ্ধতির উপরও ক্রমবর্ধমান জোর দেওয়া হচ্ছে। এই নিবন্ধে কিছু বাংলাদেশীয় সার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো (Fertilizer)

বাংলাদেশীয় কৃষি সার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক (Agriculture Fertilizer):

বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে প্রায় অনেক রকমের সার ব্যবহৃত হয়, সেই সারের মধ্যে থেকে প্রয়োজনীয় কিছু সারের ব্যাপারে নিচে ব্যাখ্যা করা হলো।

বাংলাদেশের সর্বোত্তম সার সম্পর্কে বিবৃতি (Best fertilizer):

১. ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট (Dap fertilizer):

ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট সার একটি সার যা নাইট্রোজেন এবং ফসফেটের উচ্চ সংমিশ্রণের জন্য পরিচিত (Fertilizer)। এটি সাধারণত কৃষিক্ষেত্রে উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহের জন্য ব্যবহৃত হয়। সারের দ্রাব্যতা বেশি, এই কারণেই এটি অন্যান্য সারের তুলনায় আরও কার্যকরভাবে কাজ করে। 

ব্যবহার:

  • ডাই-অ্যামোনিয়াম সারের অপরিহার্য পুষ্টি একটি উদ্ভিদের সুস্থ ফুল এবং ফলের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয়। এ ছাড়াও, এগুলি নতুন শিকড় ও বীজ গঠনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • এই সারে ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে গাছের যেকোনো রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
  • এর উচ্চ পুষ্টি উপাদান এবং চমৎকার বৈশিষ্ট্যের কারণে, এই সার কৃষকদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পছন্দ। সঠিক পরিমাণে এটি ব্যবহার করা হলে ফসলের সুস্থ বৃদ্ধি ও লাভের মার্জিন সর্বাধিক করার জন্য এই সারের ব্যবহারকে সর্বোত্তম উপায় হিসাবে প্রমাণিত করা যেতে পারে।

২. ট্রিপল সুপার ফসফেট (Tsp fertilizer): 

ট্রিপল সুপারফসফেট সার হল ফসফরাস সমৃদ্ধ একটি অজৈব বা খনিজ সার। এটি সাধারণত শক্তিশালী শিকড়ের বিকাশ, ফুল ফোটার উন্নতি ও ফসলের ফলন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের কৃষিকাজে এটির ব্যবহার ব্যাপক।

ব্যবহার:

ট্রিপল সুপারফসফেট সার টমেটো, মটরশুটি এবং ফলের গাছের মতো ফসলে ভালোভাবে ফুল ফুটতে এবং ফল ধরতে উৎসাহিত করে। কৃষিকাজের পাশাপাশি,এই সার জলজ চাষে ব্যবহার করা যেতে পারে, যার মধ্যে চিংড়ি চাষও রয়েছে।

  • রোপণের আগে এই সারটি মাটির সাথে মিশিয়ে নিন। মাটির ধরণ, ফসলের চাহিদার উপর নির্ভর করে সারের পরিমাণ পরিবর্তিত হয় (Fertilizer)। 
  • এই সার পুকুরে ফসফরাস সহ প্রাথমিক পুষ্টি সরবরাহ করে। এই সারের ফসফরাস চিংড়ি খামারে প্ল্যাঙ্কটন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলির মধ্যে একটি।
  • এর অতিরিক্ত ব্যবহার এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। ব্যবহারের সময় প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম ব্যবহার করুন, কারণ এটি ত্বকের জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।

৩. পটাশ সার (Potash fertilizer):

পটাশ সার হল পটাশিয়াম এর একটি প্রধান উৎস, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। এটি ফসলের ফলন বৃদ্ধি করে, উদ্ভিদের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। 

ব্যবহার:

  • মাটিতে পুষ্টির মাত্রা রক্ষার জন্য, শরৎকালে পটাশ সার  প্রয়োগ করা বাঞ্ছনীয়। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বসন্তকালে এই সার প্রয়োগ করলেও তা সমানভাবে কার্যকর হয়।
  • এই সার শস্যের গুণমান বৃদ্ধির সাথে সাথে টমেটো, আলু ও কলার মতো ফসলের আকার, রঙ এবং স্বাদ উন্নত করে।
  • বাণিজ্যিক চাষীদের কাছে পটাশ প্রয়োগের জন্য তিনটি প্রধান বিকল্প রয়েছে। ফসলের ধরণ, মাটির অবস্থা এবং সরঞ্জামের উপর নির্ভর করে দ্রুত শোষণের জন্য  ফসলের পাতায় এটি স্প্রে করুন এবং সমানভাবে ছড়িয়ে দিন। 

৪. জৈব সার (Organic fertilizer):

জৈব সার হল বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত সার (Fertilizer)। এই সার হল উদ্ভিদ, প্রাণী বা খনিজ পদার্থ থেকে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক পদার্থ যা মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করে, উদ্ভিদের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।

ব্যবহার:

  • কোনো গাছ রোপণের আগে বাগানের জৈব সারটি মাটির সাথে মিশিয়ে নিন। আর্দ্রতা ধরে রাখতে এবং পুষ্টি যোগ করতে গাছের চারপাশে জৈব পদার্থ ছড়িয়ে দিন।
  • জৈব সার মাটির গঠন উন্নত করতে পারে, এটি ব্যবহারের আর একটি সুবিধা হল যে তারা অণুজীবের কার্যকলাপ বৃদ্ধি করে এবং ফলন উন্নত করতে পারে। এই সার ধারাবাহিকভাবে পুষ্টি সরবরাহ করে (Fertilizer)।
  • তরল খাদ্য হিসেবে এর ব্যবহার করতে মাছের ইমালসনের মতো জৈব সার পাতলা করুন এবং স্প্রে হিসেবে একে পাতায় প্রয়োগ করুন।
কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ট্রিপল সুপার ফসফেট, ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট সার, জৈব সারের মতো সারের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। এই দেশে বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা রয়েছে, স্থানীয় উৎপাদন সত্ত্বেও প্রধানত চীন, সৌদি আরব এবং মরক্কোর মতো দেশ থেকে চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সার আমদানি করে।

উপসংহার 

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে সারের গুরুত্ব অনস্বীকার্য, সারের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং এর নেতিবাচক প্রভাব কমাতে টেকসই অনুশীলন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির প্রয়োজন। দেশীয় সার শিল্পকে শক্তিশালী করে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তায় সহায়তা করবে। এছাড়াও ঘরে তৈরি সারও অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন (Homemade fertilizer)। উপরে বাংলাদেশের বিখ্যাত কিছু সারের বর্ণনা দেওয়া আছে যা কৃষিক্ষেত্রে সাহায্য করবে (Fertilizer)। 

একটি প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ):

প্রশ্ন ১. সার কাকে বলে (Fertilizer)?

উত্তর ১: সার হল মাটিতে যোগ করা একটি পদার্থ যা নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে উদ্ভিদের উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এটি প্রাকৃতিক বা কৃত্রিম ও হতে পারে অথবা জৈব, অজৈব এবং জৈব-সার সহ বিভিন্ন রূপে এটি পাওয়া যায়।

প্রশ্ন ২. পটাশ সার কিসের জন্য ব্যবহৃত হয়?

উত্তর ২: পটাশ সার, যা পটাশিয়াম সার নামেও পরিচিত, এটি উদ্ভিদের বিকাশের জন্য একটি অপরিহার্য পুষ্টি উপাদান। এটি ফসলের ফলন উন্নত করতে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং উদ্ভিদের গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করে।

প্রশ্ন ৩. জৈব সার কিভাবে তৈরি করে?

উত্তর ৩: জৈব পদার্থ যেমন পশুর বর্জ্য, ফসলের অবশিষ্টাংশ এবং খাদ্য বর্জ্যকে ভার্মিকম্পোস্টের মতো প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পচিয়ে জৈব সার তৈরি করা হয় (Fertilizer)। 

প্রশ্ন ৪. সুপার ফসফেট কখন ব্যবহার করতে হয়?

উত্তর ৪: সুপার ফসফেট, এক ধরণের সার যাতে উচ্চ ফসফরাস থাকে, সাধারণত রোপণের আগে চারাগাছের মতো ফসলের প্রাথমিক বৃদ্ধির পর্যায়ে মাটিতে এটি প্রয়োগ করা হয়। 

Visited 1 times, 1 visit(s) today
Close