Written by 8:00 pm Interesting, Gardening

Bangladeshi Fruits: বাংলাদেশের সেরা ৬টি ফল সম্পর্কে উপযোগী তথ্য

Bangladeshi fruits

বাংলাদেশ হলো বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফলের আবাসস্থল। এর উপক্রান্তীয় জলবায়ু এবং সমৃদ্ধ মাটির কারণে, এখানে বিভিন্ন ধরণের ফল চাষের জন্য আদর্শ, যার মধ্যে রয়েছে আম এবং কাঁঠালের মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল থেকে শুরু করে পেঁপে এবং আঙ্গুরের মতো আরও অনেক ফলের গাছ। এই নিবন্ধে  আমরা বাংলাদেশের কিছু ফলের গাছ সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো (Bangladeshi fruits)।

বাংলাদেশের ফল সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক (Fruit of Bangladesh):

বাংলাদেশে ৫০টিরও বেশি ধরণের ফল পাওয়া যায়, বছরে ১ কোটি টনেরও বেশি ফল উৎপাদন হয়। নিচে এই দেশের কিছু জনপ্রিয় ফল নিয়ে আলোচনা করা হলো (Bangladeshi fruits)। 

১. আম (Mango):

আমের বিজ্ঞানসম্মত নাম ম্যাঙ্গিফেরা ইন্ডিকা (Mangifera indica)। গাছটি আয়তনে লম্বা হয়, ফুল ফোটার পরে তিন থেকে পাঁচ মাস পরে এই গাছে ফল ধরে।

  • আম গাছের পূর্ণ সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়, এর জন্য ভালোভাবে নিষ্কাশনযোগ্য বেলে বা দোআঁশ মাটিই আদর্শ। উপরের দুই ইঞ্চি মাটি শুকিয়ে গেলে তবেই এই গাছে হল দেবেন, ভেজা মাটিতে গাছটিকে বসতে দেবেন না। আম গাছ সাধারণত বর্ষাকালে রোপণ করা উচিত।
  • মাটি উর্বর থাকেল এই গাছগুলিতে খুব বেশি সারের প্রয়োজন হয় না, মাটির পরিস্থিতি খারাপ হলে লেবেলের নির্দেশাবলী অনুসরণ করে ধীর-মুক্ত সুষম সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। গাছে ফল ধরার পরে দুই বছর অন্তর সঠিক আকার বজায় রাখতে এর ছাঁটাই করুন।
আম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলগুলির মধ্যে একটি। আমকে ভারতের জাতীয় ফল হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, যদিও এর উৎপত্তি স্থল দক্ষিণ এশিয়া। ১,০০০ টিরও বেশি জাতের আম রয়েছে, এতে ভিটামিন A, C এবং E রয়েছে যা স্বাস্থ্যের উন্নতি করে।

২. আনারস (Pineapple):

আনারস এর উজ্জ্বল, মিষ্টি স্বাদের জন্য সুপরিচিত। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম আনানাস কমোসাস (Ananas comosus), বাংলাদেশে, আনারস গাছ সাধারণত বর্ষাকালে অথবা বসন্তকালে রোপণ করা হয় (Bangladeshi fruits)। এটি উচ্চতায় ১-২ মিটার লম্বা হয়।

  • আনারস গাছগুলি ভালোভাবে জল নিষ্কাশনকারী, সমৃদ্ধ মাটি পছন্দ করে (Pineapple Plant), এটির ৬-৮ ঘন্টা রোদের প্রয়োজন হয়। এই গাছটিকে তার জীবদ্দশায় প্রচুর পরিমাণে জল দিতে হবে। 
  • আনারস গাছগুলিকে তাদের বৃদ্ধির মরসুমে মাসে একবার হালকা তরল সার দিতে পারেন। অভিন্ন চেহারার জন্য, এই গাছের লম্বা পাতাগুলি ছাঁটাই করুন। এই গাছের বৃদ্ধির জন্য ৬৫-৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা আদর্শ।
প্রতিটি আনারস একটি ফল নয় বরং একটি কেন্দ্রের চারপাশে মিশে থাকা অনেকগুলি বেরির সমষ্টি। এর উৎপত্তি স্থল হলো দক্ষিণ আমেরিকা। এই গাছ বিভিন্ন পোকামাকড় তাড়াতে সাহায্য করে।

৩. তরমুজ (Watermelon):

তরমুজের বিজ্ঞানসম্মত নাম সিট্রুল্লাস ল্যানাটাস (Citrillus lunatus)। এটি একটি  উপকারী রসালো, মিষ্টি ফল, গাছটি ৯ থেকে ১৮ ইঞ্চি লম্বা হয়। 

  • তরমুজের বৃদ্ধির জন্য পূর্ণ সূর্যালোকের প্রয়োজন হয় (Growing Watermelon)। বেলে, দোআঁশ মাটি এর বৃদ্ধির জন্য সর্বোত্তম উদাহরণ, বাংলাদেশে, এর বীজ সাধারণত শীতের শেষ থেকে বসন্তের শুরুতে অথবা গ্রীষ্মের শেষ থেকে শরতের শুরুতে রোপণ করা হয় (Bangladeshi fruits)।
  • প্রথমবার তরমুজ রোপণ করার পরে নিয়মিত এদের জল দেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে খুব বেশি জল দিলে এরা নিজেদের মিষ্টি স্বাদ হারিয়ে ফেলে। পাতার বৃদ্ধির জন্য উচ্চ নাইট্রোজেনযুক্ত সার ব্যবহার করুন। লতাগুলিতে ফুল ফোটা শুরু করলে উচ্চ পটাসিয়াম ও ফসফরাসযুক্ত সার ব্যবহার করুন। 
তরমুজ এক ধরণের লতাজাতীয় ফসল, এতে প্রায় ৯২% জল থাকে। এর উৎপত্তি স্থল হলো পশ্চিম আফ্রিকা। এটি ভিটামিন A এবং C সমৃদ্ধ যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।

৪. পেয়ারা (Guava):

পেয়ারার বিজ্ঞানসম্মত নাম সিডিয়াম গুয়াজাভা (Psidium guajava)। বাংলাদেশে এটি ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়, সাধারণত বর্ষাকালে এই ফলের গাছ রোপণ করা হয় (Bangladeshi fruits)। এর উচ্চতা ৩-১০ মিটার হয়।

  • পেয়ারা গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৬-৮ ঘন্টা সূর্যালোকের প্রয়োন হয়। গাছটি  বেশিরভাগ ধরণের মাটির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। বৃদ্ধির মরশুমে সপ্তাহে একবার বা দুবার এই গেছে জল দেওয়া উচিত।
  • এই গাছে ৫-৫-৫ বা ৬-৬-৬ এর মতো ধীর-মুক্তির সার ব্যবহার করা যেতে পারে। পেয়ারা গাছটি অঙ্কুরিত হওয়ার প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস পরে এটির ছাঁটাই শুরু করতে পারেন।
পেয়ারা মধ্য আমেরিকার একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল (Guava fruit), যদিও এর আদি নিবাস হলো ব্রাজিল, বাংলাদেশ। এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, এর বীজ খাওয়া যেতে পারে, এবং এর পাতা প্রায়শই ভেষজ চা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

৫. লিচু (Lychee):

লিচুর বিজ্ঞানসমত নাম লিচু চিনেনসিস (Litchi chinensis)। বাংলাদেশে, লিচু গাছ সাধারণত শীতল মাসগুলিতে (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত রোপণ করা হয়, এটি উচ্চতায় ২০-১১০ ফুট লম্বা হয়।

  • লিচু পূর্ণ রোদে জন্মায়। লিচু আর্দ্র, সুনিষ্কাশিত মাটি পছন্দ করে, এটিকে টবে চাষ করতে চাইলে  সামান্য অম্লীয়, ভাল জল নিষ্কাশনকারী মাটি ব্যবহার করুন। মাটি শুকনো মনে হলে নতুন গাছগুলিকে ঘন ঘন জল দিন। আর প্রতিষ্ঠিত গাছগুলিতে সপ্তাহে একবার জল দেওয়া যেতে পারে।
  • ক্রমবর্ধমান মরসুমে এই গাছে এক থেকে দুবার দুর্বল তরল সার দিন, ফল সংগ্রহের পরপরই এর ছাঁটাই করুন। বাংলাদেশে, এই ফলটি সাধারণত মে থেকে জুলাই মাসে সংগ্রহ করার জন্য প্রস্তুত হয় (Bangladeshi fruits)।
লিচু দক্ষিণ চীন এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ফল। এটি ভিটামিন C, ফাইবার সমৃদ্ধ, যা এটিকে আরও পুষ্টিকর করে তোলে। এটি প্রায়শই মিষ্টান্ন, পানীয় এবং স্যালাডে ব্যবহৃত হয়।

৬. কাঁঠাল (Jackfruit):

কাঁঠালকে বাংলাদেশের জাতীয় ফল হিসেবে গণ্য করা হয় (National fruit of Bangladesh)। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম আর্টোকার্পাস হেটেরোফিলাস (Artocarpus heterophyllus) এই গাছের লালচে-বাদামী বাকল, বিস্তৃত বড় শাখা এবং চকচকে সবুজ ৮ ইঞ্চি পাতা থাকে।

  • কাঁঠাল গাছটি ভালোভাবে বেড়ে ওঠার জন্য বেশিরভাগ দিনই কমপক্ষে ছয় ঘন্টা সূর্যালোকের প্রয়োন হয়। এই গাছটি পুষ্টি সমৃদ্ধ মাটি পছন্দ করে, যদিও এরা অম্লীয় মাটিতে সবচেয়ে ভালো বৃদ্ধি পায়। প্রচণ্ড তাপের কারণে মাটি শুকিয়ে গেলে তখনই জল দিন। বাংলাদেশে, কাঁঠাল গাছ সাধারণত বর্ষাকালে অথবা বসন্তকালে রোপণ করা হয় (Bangladeshi fruits)।
  • বসন্ত ও শরৎকালে বছরে দুবার লেবেলের নির্দেশাবলী অনুসরণ করে কাঁঠাল গাছে সার প্রয়োগ করুন, ধীর-মুক্ত দানাদার সার ব্যবহার করুন। ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে গাছের রোগাক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্ত অংশ অপসারণ করুন। 
কাঁঠাল হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গাছের ফল, যার ওজন ৪০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এই গাছটি ভারতের একটি বৃহৎ, গ্রীষ্মমন্ডলীয় চিরহরিৎ গাছ, যা তুঁত পরিবারের অন্তর্ভুক্ত, এর উৎপত্তি স্থল এশিয়া। এটি ফাইবার, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি সমৃদ্ধ উৎস। 

উপসংহার: 

পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরণের সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফলের সমাহার রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল এবং লিচুর মতো গ্রীষ্মমন্ডলীয় জনপ্রিয় ফল। সমৃদ্ধ মাটি এবং অনুকূল জলবায়ুর কারণে, বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরণের মৌসুমী ফল ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। উপরে আলোচিত বাংলাদেশের বিভিন্ন ফলগুলো জলবায়ু অনুযায়ী আপনি নিজের বাগানে রোপণ করতে পারেন (Bangladeshi fruits)।

একটি প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ):

প্রশ্ন ১. বাংলাদেশে কি কি ফল পাওয়া যায় (Bangladeshi fruits)?

উত্তর ১: বাংলাদেশে হলো বিভিন্ন সুস্বাদু ফলের সমাহার, যার মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল,পেঁপে, আনারস, তরমুজ, লিচু, পেয়ারা এবং আরও অনেক কিছু। 

প্রশ্ন ২. বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফল কোনটি?

উত্তর ২: কাঁঠাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফল হিসেবে বিবেচিত হয়, কিছু জাতের দৈর্ঘ্য ৮ ফুট পর্যন্ত এবং ওজন ১১০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়।

প্রশ্ন ৩. কোনটি ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল?

উত্তর ৩: কমলালেবু বিশেষ করে ভিটামিন C-এর অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস, কিন্তু বাংলাদেশে পেঁপে একটি সাধারণ ফল যা ভিটামিন A এবং C, এর পাশাপাশি পটাসিয়াম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ একটি ফল।

প্রশ্ন ৪. ভিটামিন পাওয়ার জন্য কোন ফল বা সবজি নিয়মিত খাওয়া উচিত?

উত্তর ৪: পেঁপে, আনারস, গাজর, পালং শাক এবং বেল মরিচের মতো বিভিন্ন ধরণের রঙিন ফল এবং শাকসবজি খেলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং পুষ্টি পাওয়া যায়। 

Visited 1 times, 1 visit(s) today
Close